নজর বাংলা বিশেষ প্রতিবেদন: চোখ প্রাণীর আলোক-সংবেদনশীল অঙ্গ ও দর্শনেন্দ্রীয়। প্রাণিজগতের সবচেয়ে সরল চোখ কেবল আলোর উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির পার্থক্য করতে পারে। উন্নত প্রাণীদের অপেক্ষাকৃত জটিল গঠনের চোখগুলো দিয়ে আকৃতি ও বর্ণ পৃথক করা যায়। অনেক প্রাণীর (এদের মধ্যে মানুষ অন্যতম) দুই চোখ একই তলে অবস্থিত এবং একটি মাত্র ত্রিমাত্রিক “দৃশ্য” গঠন করে। আবার অনেক প্রাণীর দুই চোখ দুইটি ভিন্ন তলে অবস্থিত ও দুইটি পৃথক দৃশ্য তৈরি করে (যেমন – খরগোশের চোখ)।
♦️সংক্ষিপ্ত বিবরণ: ইউরোপিয়ান বাইসনের চোখ
জটিল চোখ আকার এবং রং আলাদা করতে পারে। অনেক প্রাণীর চাক্ষুষ ক্ষেত্র, বিশেষ করে শিকারীর, গভীরতার উপলব্ধিকে উন্নত করার জন্য দুই চক্ষুর উপযোগী দৃষ্টিভঙ্গির বড় অংশগুলি অন্তর্ভুক্ত করে। অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে, চোখগুলি এমনভাবে অবস্থিত থাকে যাতে ক্ষেত্রের সর্বাধিক পরিমাণ দেখা যায়, যাদের একক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে, যেমন খরগোশ এবং ঘোড়া।
ক্যামব্রিয়ান বিস্ফোরণের সময় প্রায় ৬০০ মিলিয়ন বছর আগে প্রাণীদের মধ্যে প্রথম আদি-চোখ অভিব্যক্ত হয়। ৬০০ কোটি বছর আগে পশুর শেষ সাধারণ পূর্বপুরুষদের দৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় জৈবরাসায়নিক সরঞ্জামাদি ছিল এবং আরো উন্নত চোখ প্রধান পর্বে ছয়টির মধ্যে পশু প্রজাতির ৯৬% প্রবর্তিত হয়েছে। বেশিরভাগ মেরুদন্ডী এবং কিছু শামুক জাতীয় প্রাণীর মধ্যে, চোখ আলো প্রবেশ করতে দিয়ে, চোখের পিছনে একটি হালকা সংবেদনশীল প্যানেল যেটি রেটিনা হিসাবে পরিচিত তাতে, আলো নিক্ষেপ করে কাজ করে। কোন কোষগুলি (রঙের জন্য) এবং রড কোষ (অল্প আলোর কন্ট্রাস্টের জন্য) রেটিনাতে সনাক্ত করে এবং দর্শনের জন্য স্নায়ু সংকেতগুলিতে রূপান্তর করে। চাক্ষুষ সংকেত তারপর অপটিক স্নায়ু মাধ্যমে মস্তিষ্কে প্রেরিত হয়। বিশেষত এই ধরনের চোখ প্রায়শই গোলাকার হয়, একটি স্বচ্ছ জেল মত পদার্থ vitreous humor দ্বারা ভরাট হয়, একটি ফোকাসিং লেন্স এবং প্রায়ই একটি কনীনিকার সঙ্গে;কনীনিকা বা আইরিশের চারপাশের মাংসপেশীর শিথিল বা দৃঢ়তা চোখের পুতলি অথবা পিউপিলের আকার পরিবর্তন করে, যার ফলে চোখটিতে ঢুকে যাওয়া আলোর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা হয়, এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো ছড়িয়ে পড়ে এবং অত্যধিক আলো কমিয়ে বিচ্যুতি নিয়ন্ত্রণ করে। সর্বাধিক জীবজন্তুর জাতিবিশেষ, মাছ, উভচর প্রাণী এবং সাপের চোখগুলি লেন্সের আকৃতিগুলি অপরিবর্তনীয়, এবং লেন্স দূরবীন তৈরি করে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে দৃষ্টিগোচর হয় – একটি ক্যামেরা যেভাবে ফোকাস করে।
যৌগিক চোখগুলি সন্ধিপদীদের মধ্যে পাওয়া যায় এবং অনেক সহজ উপায়ে গঠিত হয়, যা শারীরিক বিশ্লেষণের উপর ভিত্তি করে, একটি পিক্সেল্যাট ইমেজ বা একাধিক ইমেজ, প্রতি চোখ প্রতিস্থাপন করতে পারে। প্রতিটি সেন্সরের নিজস্ব লেন্স এবং আলোকসংবেদী কোষ রয়েছে। কিছু চোখ ২৮০০০ এর মতো সেন্সর আছে, যা ষড়্ভুজাকারভাবে সাজানো হয় এবং যা একটি পূর্ণ ৩৬০ ° দর্শনের ক্ষেত্র দিতে পারে। যৌগিক চোখ গতিতে অত্যন্ত সংবেদনশীল। বেশিরভাগ স্ট্রেপসিপেরার সহ কিছু আর্থপোড, মাত্র কয়েকটি দিকের যৌগিক চোখ, প্রতিটিতে একটি রেটিনা রয়েছে যা ছবি, দৃষ্টি তৈরি করতে সক্ষম। প্রতিটি চোখের একটি ভিন্ন জিনিস দেখার সঙ্গে, সমস্ত চোখ থেকে একটি জড়িত ইমেজ মস্তিষ্কের মধ্যে উত্পাদিত হয়, খুব ভিন্ন, উচ্চ-রেজল্যুশন ছবি তৈরি করে।
অতিবর্নালীযুক্ত বর্ণের বিস্তারিত বিশ্লেষণে, মান্টিস চিংড়ি বিশ্বের সবচেয়ে জটিল রং দৃষ্টি ব্যবস্থার জন্য নথিভুক্ত করা হয়েছে। ট্রাইলোবাইট, যা এখন বিলুপ্ত, অনন্য যৌগিক চোখের অধিকারী। তারা তাদের চোখের লেন্স গঠন স্পষ্ট ক্যালসাইট স্ফটিক ব্যবহৃত। এগুলি, তারা অন্যান্য আর্থপোড, যা নরম চোখ আছে তাদের থেকে পৃথক। সেরকম একটি চক্ষুর লেন্সের সংখ্যা বিভিন্ন হয়, তবুও কিছু ট্রাইলোবাইটের একটিমাত্র ছিল, এবং কিছুদের এক চোখের মধ্যে হাজার হাজার লেন্স থাকত।
♦️মানুষের চোখের বিভিন্ন অংশসমূহ:
১) শ্বেতমন্ডল(sclera) :-
এটা চোখের আচ্ছাদনকারী সাদা অংশ। এটা চোখে বহীরাবরকের পেছনের দিকের ৫/৬ অংশ স্থান জুড়ে অবস্থিত। এটা ও ভিতরের তরল পদার্থগুলো (অ্যাকুয়াস হিউমার ও ভিট্রিয়াস হিউমার) মিলে চোখের সূক্ষ্ম অংশগুলোকে রক্ষা করে। এটি সাদা ও অস্বচ্ছ এবং সাদা বর্ণের কোলাজেন তন্তু দ্বারা গঠিত যার ভিতরে আলো প্রবেশ করতে পারে না।
২) কর্নিয়া (cornea):-
এটা গম্ভুজ আকারের স্বচ্ছ পর্দা যা চোখের সামনের অংশ ঢেকে রাখে। এটি চোখে বহীরাবরকের সামনের দিকের ১/৬ অংশ স্থান জুড়ে অবস্থিত। এটা স্বচ্ছ, কারণ এতে কোন রক্তজালিকা নেই। চোখ প্রতিস্থাপন (eye transplant) বলতে আসলে কর্নিয়ার প্রতিস্থাপন বুঝায়।
৩) অ্যাকুয়াস হিউমার (aqueous humor):-
এটা জলীয় পদার্থের মত তরল পদার্থ যা সিলিয়ারি বডি থেকে উৎপন্ন হয়। চোখের সামনের অংশ (লেন্স এবং কর্নিয়ার মধ্যবর্তী অংশ) এই তরলে পূর্ণ থাকে।
৪) আইরিশ (Irish):-
এটা চেখের রঙিন অংশ যা অনেকটা আংটির মত। এটা বিভিন্ন রঙের হয়। যেমন- বাদামি, সবুজ, নীল ইত্যাদি। আলোর তীব্রতার উপর নির্ভর করে আইরিশ সংকোচিত বা প্রসারিত হয়। এতে পিউপিলের আকার পরিবর্তিত হয় এবং লেন্স ও রেটিনায় আপতিত আলোর পরিমাণ নিয়ন্ত্রিত হয়।
৫)পিউপিল (pupil):-
এটা হল আইরিশের মাঝের খোলা অংশ যেখান দিয়ে আলো লেন্সে প্রবেশ করে। এটার আকার আইরিশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।তারারন্ধ্রের মধ্য দিয়ে আলো চোখের ভিতরে প্রবেশ করে।
৬) লেন্স (শারীরবিদ্যা) (lens):-
রেটিনার উপর আলোক রশ্মি কেন্দ্রীভূত করে। এতে রক্ত সরবরাহ নেই। এর আকার সিলীয় পেশী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।এটি ক্রিস্টালাইন প্রোটিন দিয়ে তৈরি।এটা আইরিশের মাংসপেশি দ্বারা সঙ্কুচিত ও প্রসারিত হতে পারে। এর ফলে আমরা সহজেই কাছের ও দূরের জিনিস দেখতে পাই। (উল্লেখ্য যে কাছের জিনিস দেখতে আমাদের চোখের লেন্স প্রসারিত হয় এবং দূরের জিনিস দেখতে আমাদের চোখের লেন্স সঙ্কুচিত হয়।)
৭) ভিট্রেয়াস হিউমার (vitreous humor):-
এটা জেলির মত পদার্থ যা চোখের বেশিরভাগ অংশ পূর্ণ করে রাখে (লেন্সের পিছন থেকে রেটিনা পর্যন্ত)।
৮) কোরয়েড বা কৃষ্ম মণ্ডল (choroid) :-
এই স্ক্লেরা ও রেটিনার মধ্যবর্তী রক্তবাহিকাসমৃদ্ধ ও মেলানিন রঞ্জকে রঞ্জিত স্তর। মেলানিন রঞ্জক থাকায় এটি কালো দেখায়।এটা রেটিনাতে রক্ত সরবরাহ করে এবং রেটিনা হতে আগত অতিরিক্ত আলো শোষণ করে নেয়। এর ভিতরে রয়েছে আইরিশ ও লেন্স। এটি একটি ঘন রন্জিত পদার্থের স্তর।
৮) রেটিনা (retina):-
এটা হল চোখের আলোক সংবেদী অংশ। এটা আলোকরশ্মিকে তড়িৎ সংকেতে (electrical signal) রূপান্তর করে দর্শন স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কে পাঠায়। রেটিনায় দুই ধরনের আলোকসংবেদী কোষ (photoreceptor) থাকে। এরা হল – রডকোষ (rod) এবং কোন্কোষ (cone)। রডকোষ আবছা/মৃদু আলোতে দেখতে সাহায্য করে, আর কোন্কোষ স্বভাবিক/উজ্জ্বল আলোতে দেখতে সাহায্য করে। কোন্কোষ থাকার জন্য আমরা বিভিন্ন রং চিনতে পারি এবং তাদের মধ্যে পার্থক্য করতে পারি। অর্থাৎ আমাদের রঙিন বস্তু দর্শনে কোন্কোষগুলো দায়ী।
৯) ফোবিয়া (fovea):-
রেটিনার মাঝামাঝি এবং অন্ধবিন্দুর কাছাকাছি একটি খাঁজ দেখা যায়। এটাই ফোবিয়া। এখানে প্রচুর কোন্কোষ থাকে কিন্তু কোন রডকোষ থাকে না। আমাদের দর্শনানুভূতির বেশিরভগই এর উপর নির্ভর করে।
১০) অন্ধবিন্দু (optic disk/ blind spot):-
এটি দর্শন স্নায়ুর প্রান্তবিন্দু। এখানে কোন আলোকসংবেদী কোষ (রড ও কোন্) থাকে না।
১১) দর্শন স্নায়ু (optic nerve):-
এটা মানুষের দ্বিতীয় করোটিক স্নায়ু (cranial nerve)। এর মাধ্যমে চোখ থেকে আলোকসংবেদ মস্তিষ্কে পৌছায়।
** চোখ সম্পর্কিত এই নিবন্ধটি গুগল উইকিপিডিয়া থেকে সংগৃহীত ও সংশোধিত।