আমার সমস্ত সৃষ্টি ধ্বংস করা হোক- দাবি কবীর সুমনের

দেশ

নজর বাংলা ডিজিটাল ডেস্ক: বাংলা গান ঘুরে দাঁড়িয়েছিল তাঁকে পেয়ে। সাহিত্য-সাংবাদিকতার পরিসরেও তিনি আর বার বইয়ে দিয়েছেন খোলা বাতাস। ‘৯০ পরবর্তী বাংলা ও বাঙালির আইকন কবির সুমন এবার সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর উইল প্রকাশ করলেন। সুমন চান না, মৃত্যু পরবর্তী পর্যায়ে তার কোনও সৃষ্টির কোনও অস্তিত্ব থাকুন। তাঁর যুক্তি, সব ধ্বংস করে যেন ট্রাকে তুলে দেওয়া হয়।

সোশ্যাল মিডিয়ায় বিষয়টির অবতারণা করে সুমন লিখেছেন, খুব জরুরি বিষয়। আবেগহীনভাবে সকলকে জানিয়ে রাখছি, কারণ হঠাৎ কিছু ঘটে গেলে কঠিন সমস্যা দেখা দেয়। প্রায় অনুরূপ একটা সমস্যা দেখা দিয়েছিল ২০১২ সালে আমি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হবার পর। খোলাখুলি সকলকে জানিয়ে রাখছি। অনুগ্রহ করে মতামত দেবেন না। ভাল মন্দ কিছু লিখবেন না। এটা এক প্রবীন মানুষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞপ্তি। অনেক অভিজ্ঞতার পর, অনেক ভেবেচিন্তে লিখছি। ফেসবুকে, যাতে অনেকেই এটা জেনে যান। অনুগ্রহ করে আবেগের বশবর্তী হবেন না, উপদেশ পরামর্শ দেবেন না। আমি আমার কাজ করে যাচ্ছি, যাবো। আমার জীবনে কোনও হতাশা, দু:খ, ব্যর্থতাবোধ, অবসাদ নেই। আমি সানন্দে বেঁচে আছি, আমার কাজ করে যাচ্ছি। আমার জীবনে ভালবাসা কামনা কাম লালসা আনন্দ স্ফুর্তি মজা রঙ্গরগড় হাসাহাসি নিভৃত কান্না কাজ অধ্যবসায় নিয়মিত রেয়াজ পরিশ্রম সৃজনশীলতা সবই আছে। প্রয়াত খুশওয়ান্ত সিং তাঁর ‘ দি এণ্ড অফ ইণ্ডিয়া’ গ্রন্থে লিখেছিলেন – “কাজই ধর্ম”। আমি তাইই মনে করি। আমার ধর্ম কাজ। প্রতিনিয়ত আমি আমার কাজ করে যাচ্ছি, অর্থাৎ স্বধর্ম পালন করছি। আমি জানি আমি সানন্দে,খুশি মনে মারা যাবো। আমি বেঁচে আছি বাংলা খেয়াল বাংলা গান সুরতালছন্দলয়, আমার স্বভাবসিদ্ধ ভালবাসা কাম কামনা খামখেয়ালিপনা inconsistency এক ধরণের ক্ষ্যাপামি আর সুরতাললয়ে থেকে মৃত্যুর অপেক্ষায়। অন্য কোনও বিষয়ে আমি নেই। ”

এর পর উইলটিতে তিনি লিখছেন, আমার মৃত্যুর পর যেন দেহ দান করা হয় চিকিৎসাবিজ্ঞানের কাজে। কোনও স্মরণসভা, শোকসভা, প্রার্থনাসভা যেন না হয়। আমার সমস্ত পাণ্ডলিপি, গান, স্বরলিপি, পেনড্রাইভ, হার্ড ডিস্ত, লেখার খাতা, প্রিন্ট আউট যেন কলকাতা পুরসভার গাড়ি ডেকে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় সেগুলি ধ্বংস করার জন্য। আমার কোনও কিছু যেন আমার মৃত্যুর পর পড়ে না থাকে। আমার ব্যবহার করা সমস্ত যন্ত্র, বাজনা, সরঞ্জাম যেন ধ্বংস করা হয়। এর অন্যথা হবে আমার অপমান।”

নয়ের দশে বাংলা গানের জগতে পা রাখেন সুমন। তাঁর সেই আসা বাংলা গানের খোলনলচে বদলে দিয়েছিল। ২০০৭ পরবর্তী সময়ে নন্দীগ্রাম জমি আন্দোলনকে কেন্দ্র করে তাঁর রাজনীতির প্রাঙ্গনে আসা। যাদবপুর কেন্দ্র থেকে একবার জিতে সাংসদও হন সুমন। পাশাপাশি বজায় থেকেছে সঙ্গীতচর্চা। সুমনের রাজনৈতিক অবস্থান বিজেপি বিরোধী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *