নজর বাংলা সম্পাদকীয় ডেস্ক: গোটা দেশ এখন “লাভ-জেহাদ” নিয়ে চিন্তিত। দেশে আর কোনো সমস্যা নেই, কেবলমাত্র ভিন্নধর্মী বিবাহ বন্ধ করে দিতে পারলেই, সকল সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।।
প্রথমেই বলে রাখি, “লাভ-জেহাদ” শব্দ নিয়ে আমার ঘোর আপত্তি রয়েছে। ভালোবাসা এবং যুদ্ধ, দুটো শব্দকে কোনোভাবেই একত্রিত করে দেওয়া যাবে না। লাভ -এবং জেহাদ হলো, দুটো ভিন্নধর্মী শব্দ, লাভ আর জেহাদ পরস্পরের সঙ্গে থাকতে পারে না। আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ, এখানে একজন বিবাহিতা রমনী নিজের ইচ্ছের
বিরুদ্ধে স্বামী কর্তৃক বারংবার ধর্ষিত হলে, কোনো অসুবিধা নাই। কিন্তু, একজন রমনী স্বেচ্ছায় ভিন্নধর্মী কোনো পুরুষকে ভালোবেসে বিয়ে করতে পারবে না।
মোদ্দা কথা সেই একটাই, নারীর নিজের কোনো ব্যাক্তিগত ইচ্ছা থাকলে চলবে না। নিজের পরিচয় গোপন করে, একে অপরের সঙ্গে প্রতারণা করে বিবাহ করলে, আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী, তাকে শাস্তি দেওয়ার হাজার বিধান রয়েছে। আজ , “লাভ-জেহাদ” নিয়ে স্বোচ্চার বিজেপি শাষিত উত্তরপ্রদেশের ইলাহবাদ
হাইকোর্টের রায় থেকে প্রমাণ হতে চলেছে, বিজেপি যতই “লাভ-জেহাদ” ইস্যু নিয়ে বাজার গরম করুক না কেনো, দেশের সংবিধান অনুযায়ী এই কালা-কানুন ধোপে টিকবে না।
উত্তরপ্রদেশের কূশিনগরের বাসিন্দা, মুসলিম যুবক সালামত আনসারী এবং প্রতিবেশী প্রিয়াঙ্কা খারবার, 2019 সালের আগষ্ট মাসে, একে অপরকে ভালোবেসে
বিবাহ করেন। বিবাহের পূর্বে প্রিয়াঙ্কা স্বেচ্ছায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। -এবং, তিনি আলিয়া আনসারী নাম পছন্দ করেছেন। বিবাহের কিছুদিন পরেই, প্রিয়াঙ্কার পরিবার, সালামতের নামে FIR করে।
এক কথায় শুরু হয়, লাভ জেহাদের মামলা। বিবেক আগরওয়াল এবং পঙ্কজ নাকভীর ডিভিশন বেঞ্চে মামলার শুনানি হয়। প্রিয়াঙ্কার পরিবারের পক্ষে ছিলেন, UP সরকারের মনোনীত উকিল। ডিভিশন বেঞ্চ রায় দিতে গিয়ে সরাসরি জানিয়ে দিয়েছে — “আমরা সালামত এবং
প্রিয়াঙ্কাকে একজন মুসলিম যুবক ও হিন্দু যুবতী হিসাবে দেখছি না।। বরং আমরা তাদের একজন যুবক এবং যুবতী হিসাবে দেখছি, যারা নিজের ইচ্ছায় একে অপরকে বিবাহ করেছে, এবং এক বছর ধরে, একে অপরের সঙ্গে সুখ ও শান্তিতে বসবাস করছে।”
” কারো ব্যাক্তিগত ব্যাপারে আদালত কোনোমতেই হস্তক্ষেপ করতে পারে না। দেশের সকল নাগরিকের নিজের পছন্দ অনুযায়ী জীবন যাপন করার অধিকার
রয়েছে। কারো ব্যাক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা, আদালতের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে না।।”
“দেশের প্রত্যেকটি নাগরিকের নিজের পছন্দ অনুযায়ী ধর্ম, এবং লাইফ পার্টনার বেছে নেওয়ার অধিকার রয়েছে।”
আদালত আরো জানিয়েছে — “ভারতীয়
সংবিধানের অনুচ্ছেদঃ নম্বর 21 অনুযায়ী, আদালত কালো ব্যাক্তিগত জীবন, এবং পছন্দের উপর হস্তক্ষেপ করতে পারে না।।”
আদালত সালামতের নামে দায়ের করা FIR তুলে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। -এবং, UP সরকারের মাধ্যমে, প্রিয়াঙ্কার পরিবারের পেশ করা অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছে।
বর্তমানে, বিজেপি শাষিত প্রত্যেকটি রাজ্যের হাইকোর্ট, সরকারের গালে সপাটে থাপ্পড় মেরে চলেছে। বিজেপির সমস্ত আশা-ভরসা এখন সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীক।
নিশ্চিত, UP সরকার এবং প্রিয়াঙ্কার পরিবার সুপ্রিম কোর্টের দারস্থ হবে।
এখন, সুপ্রিম কোর্ট কি নির্দেশ দেয়, সেটাই দেখার রয়েছে। (কৃতজ্ঞতা – “সত্য হিন্দি ডটকম”)
কলমে- আলম মিদ্দে