নজর বাংলা সম্পাদকীয়: গতবার খুব সহজেই পেয়ে গেছি,, কিন্তু,, এবার করোনা ভাইরাসের ইন্টারভিউ নিতে গিয়ে,, রীতিমতো কালঘাম ছুটে গেলো।।
কিন্তু,, আমি ভীষণ জেদী।। গতবার মর্ণিং
ওয়াকে বেরিয়ে,, সহজেই দেখা পেয়েছি,,
করোনা বাবুর।। ইন্টারভিউ নিয়েছি,, বন্ধুরা বেশ পছন্দ করেছেন।। সেই উৎসাহ,, এবং বন্ধুদের উপহার দেওয়া প্রেরণানিয়েই এগিয়ে চলেছি,, যেমন করেই হোক,, নিতে
হবে,, করোনা বাবুর ইন্টারভিউ।।
বেশ কয়েকদিন খোঁজাখুঁজির পর,, অবশেষে নাগালে পেলাম।। রানিহাটি-
আমতা রোডের অলোকের চা দোকানে।।
টিনের শেডের পিলারে,, হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে।।
আমাকে দেখে জোর করে হেসে বললো–
“কেমন আছেন আপনি ??”
বুঝতেই পারলাম,, এই হাসি কিন্তু আগের
মতো স্বতস্ফূর্ত হাসি নয়।। আমার মতো
হাজার কষ্ট-ব্যাথা-যন্ত্রণা লুকিয়ে রেখে,,
জোর করে হেসে যাওয়ার প্রচেষ্টা মাত্র।।
— “আরে,, আমি তো ভালোই রয়েছি,, তোমার খবর কি ??”
করোনা বললো — “দাদা,, প্রায় এক ঘন্টা ধরে পোষ্টে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে রয়েছি,,
একটা চা খেতে ভীষণ ইচ্ছা করছে,, কিন্তু যা ভীড় !! সাহস করে এগিয়ে যেতে পারছি না।। পাছে কোনো বদমাইশ ছোঁড়া……””
কথা শেষ হবার আগেই আমি বললাম —
“তুমিও আজকাল ভয় পাচ্ছো,, অথচ,,
আমেরিকা-চীন-জার্মান-ইতালি,,সবাই
তোমাকে কতোই না ভয় পেয়েছিল !!”
“—WHO তো তোমাকে শতাব্দীর সেরা খলনায়ক হিসাবে চিহ্নিত করে ফেলেছে।।”
করোনা মাথা হেট করে বললো — “সবই কপাল দাদা,, ইন্ডিয়া ঢুকে,, ইজ্জত মাঠে মারা গেলো।।”
–” দাদা,, একটা চা এনে দেবেন,, তাহলে
ইটভাটার মাঠে দাঁড়িয়ে,, চা খেতে খেতে ,,
গুটিকয় মনের ব্যাথা শুনিয়ে দিতাম।।”
করোনার উক্তি শুনে,, এই ব্যাক্তির অবস্থা
একেবারে মুর্ছা যাওয়ার মতো।।
সে বলেই চলেছে — “ঘন্টা খানেক দাঁড়িয়ে রয়েছি,,একটা চা খাওয়ার জন্য।। কিন্তু,,
ছোঁড়াদের হুড়োহুড়ি দেখে,, সাহস করে
উঠতে পারছি না,, দাদা।। প্রাণ সবার
প্রিয়।। এই ভিড়ের চাপে মরে যাওয়া,,
আত্মহত্যা করার নামান্তর।।”
দুহাতে দুটো চা নিয়ে এগুলো চললাম,,
ইটভাটার মাঠে।। সঙ্গে করোনা ভাইরাস।।
বললাম – “এখন নিজের প্রাণের চিন্তায় অস্থির হয়ে রয়েছো,, অথচ,, কোনো এক সময়,, গোটা বিশ্বের মানুষ,, তোমাকে নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছিল।।
“শ্লা,, এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরী করে দিলে,, যেখানে ভাই-ভাইকে ভয় করতে লাগলো।। হাসব্যান্ড ,, ওয়াইফ কে ছু়ঁতে চাইলো না,, প্রেমিক-প্রেমিকা,, হট চুম্বন
তো কোন ছার,, দু-গজ দূরত্ব বজায় রেখে, হাই-হ্যালো শুরু করে দিলো।।”
— “বুঝলে ভাই ?? এসব কেবলমাত্র তোমার
জন্য,, শুধুমাত্র তোমার ভয়েই…….””
প্রেম-পিরিতি,, সম্পর্ক-আত্মীয়তা,, বন্ধুত,,
সবকিছুর পরিভাষা তুমি বদলে দিলে….”
“রিপোর্ট পজেটিভ হলেই,, কেউ কারো না।।
এসব হয়েছে কেবলমাত্র তোমার জন্য।।
এর জন্য দায়ী,, একমাত্র তুমি…..””
করোনা মাথা নিচু করে,, চায়েই ভাঁড়ে চুমুক দিয়ে বললো — “দাদা,, আমি তো ভাইরাস।। আমার কাছে মানবতা আশা রাখছেন কেনো ?? কিন্তু,দাদা,তোমাদের সমাজের ডাক্তার,, স্বাস্থকর্মী,,যাদের উৎসাহ দিতে তোমরা বাসন-কাসন,, খোল-করতাল বাজিয়ে উৎসাহিত করেছিলে,, তাদের
মুখোশ খুলে দিলে,, মানবতা শব্দটাকে
ঘৃণা করতে শুরু করে দেবে।।”
করোনা বলেই চলেছে — ” দাদা,, করোনা
ভাইরাসের চেয়েও বিপজ্জনক ,, স্বার্থের
ভাইরাস।।”
–“করোনার চেয়েও ভয়ংকর হলো,, ক্ষুধার ভাইরাস।।”
–” করোনার চেয়েও মারাত্মক ভাইরাস হলো,, লোভের ভাইরাস।।”
–“অথচ,, এই সমস্ত ভাইরাসের সঙ্গে মোকাবেলা করার সৎসাহস তোমাদের
নেই।। হাত ধুয়ে আমার পিছনে পড়ে
গেছো।।”
রেগে গিয়ে বললাম — “খামোশ,, মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরী করে চলেছিস।।
আমরা কিন্ত একে অপরকে যথাসাধ্য
সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছি।।”
করোনা বললো– “দাদা,,আমাকে গাধা
ভাবলে নাকি ??”
–“তুমি ভুল ধারণা পোষণ করে চলেছো।।”
–“ছোটো-মাঝারি কম্পানী,, লকডাউনের অযুহাতে,, কর্মী ছাঁটাই করে দিলো।।
মাইনে অর্ধেক,, কেউ কেউ আবার 20 থেকে 30% করে দিলো।। সরকার নিজের
যাবতীয় ব্যার্থতার দায়,, আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিলো।। ঢোল-থালা বাজানো,,
প্রদীপ জ্বালানো হলো।। যাদের চাকরি
গেলো,,তারা কোনো ক্ষতিপূরণ পোলো না।। বেসরকারি হসপিটাল,, চিকিৎসার
নামে লুটতরাজ শুরু করে দিলো।।
পুলিশ মাস্কের বাহানায়,, পাবলিককে লাঠিপেটা করলো,, জরিমানা-ঘুস আদায় করে নিলো।।”
— “এর পরেও বলবে,, তোমরা পরস্পরকে
সহযোগিতা করেছো ?? হাস্যকর দাদা !!
একেবারেই বোগাস কথাবার্তা!!””
— “তোমরা ভাইরাস ছেড়ে,, হাথরাস নিয়ে
মেতে উঠলে।। ড্রাগস্,, বলিউড,, কঙ্গনা,,
রিয়া,, সুশান্ত,, তানিস্ক নিয়ে আলোচনা করে গেলে।। ওদিকে নেতা,,শিল্পপতি,, ব্যাবসায়ী,, ডাক্তার-মোক্তার,, সকলে করোনার সুযোগে ঝোপ বুঝে কোপ
মেরে দিলো।।”
“— কোথাকার মহামারী ,, দাদা।।
মহামারীর অযুহাতে লুটপাট ,, ব্যাপক লুটপাট হয়ে গেলো।।”
— “দাদা গো,, এখন আমি থেকেও নেই।।
তোমাদের সরকার ট্যাক্স আদায়ের খাতিরে,, সবকিছু খুলে দিলো।। আর,,
এদিকে আমি অন্তিম শ্বাস গুনে চলেছি।।”
তবে,, সবকিছু স্বাভাবিক চলছে,, কিন্তু,,
স্কুল গুলো বন্ধ।। লোকাল ট্রেন বন্ধ।।
তোমাদের ধারণা হলো,,, আমাদের আক্রমণ কেবলমাত্র স্কুল এবং লোকাল
ট্রেন কেন্দ্রীক।। আমরা হাটে,, বাজারে,,
পার্কে,, সিনেমা হলে,, কোথাও যেতে
পারি না……..”
বললাম — “ধন্যবাদ ভাই,, অনেক সময় দিলে।। আমার কাজ আছে,,একটু বের হবো।। ”
করোনা বললো — “হ্যাঁ দাদা,, অনেক সময় ধরে কথাবার্তা হলো।। যাইহোক,, তুমি মাস্ক-কে আলবিদা জানিয়ে দিয়েছো।
এখন স্যানেটাইজারের বাজার বেশ
ডাউন।।”
বললাম – “চুপ কর শ্লা,, বেশী জ্ঞান দিবিনা।। আমারা গোমূত্র সেবন,, তালি- থালি বাজিয়ে তোর বারোটা বাজিয়ে দেবো।। আমাদের আছে ভাবিজী পাঁপড়।। তোকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।। তুই
বরং পাকিস্তানে যা।।”
করোনা মাথা ঝাঁকিয়ে বললো –” দাদা,,
যেটা করার করে দিয়েছি।। আর কোনো
প্রবলেম নেই।। আমার ইচ্ছে পুরণ হয়ে
গেছে।।”
—- “হাম তো ফকির আদমি হ্যায়,, ঝোলা
উঠাকর………………………………….”
করোনা ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে।।
দেখলাম,, কিছুক্ষনের মধ্যেই সে অদৃশ্য
হয়ে গেলো।।
✍️কলমে- আলম মিদ্দে ।