আজকের ভারতবর্ষ‌ ও অমর্ত্য সেন

Breaking News সম্পাদকীয়

নজর বাংলা সম্পাদকীয় ডেস্ক: যারা তোমায় বুঝবার চেষ্টা করেনি কখনো , যারা তোমায় পড়ার চেষ্টা করেনি আজ পর্যন্ত । যারা কখনো নিরপেক্ষতার দৃষ্টিতে তোমার মত মানব সমাজকে দেখার প্রয়োজন মনে করেনি।সেই সমস্ত হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটির ছাত্রের কথায় তুমি দুঃখ কর না কখনো। কেউ তোমায় মনে রাখুক আর না রাখুক , আমার গ্রন্থালয় তোমার স্থান সর্বদা থাকবে।

তুমি স্বঘোষিত বাঙালির গর্ব না , তুমি প্রকৃত বাঙালির গর্ব। তাই তোমার জন্মদিনে জানাই শতকোটি সালাম ও প্রণাম।

নানা অন্বেষণ , ব্যাপক বিবিধ বিশ্বাস, রীতি ও আচার এবং ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির প্রাচুর্য নিয়ে গড়ে ওঠা বিপুল বৈচিত্রের দেশ এই ভারত। নোবেলজয়ী অর্থশাস্ত্রী অমর্ত্য সেনের বিভিন্ন রচনা ভারতীয় জ্ঞানদীপ্ত এমন কিছু সংকলন যা ভারতের দীর্ঘতম গণতন্ত্রকে অনুধাবন করবার প্রয়োজনীয়তাটিকে তুলে ধরে।

এই ঐতিহ্যটি যে শুধুমাত্র তার সাহিত্যক, সংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, বৈজ্ঞানিক ও গাণিতিক বিকাশের ইতিহাস টিকে প্রভাবিত করেছে তাই নয়, সেই সঙ্গে তার ধর্মীয় বিবিধতার ভিত্তি— মননগত বহুত্ববাদের উপরও গভীর প্রভাব ফেলেছে।
সাম্প্রতিক ভারত যে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জেরগুলির সম্মুখীন, তার সম্যক অনুধাবনের জন্য আমাদের বহুতত্ত্ববাদী , ভাব-বিনিময়মূলক ও গতিবান ঐতিহ্যটিকে যথাযথ মূল্য দিতেই হবে ।
পশ্চিমী দুনিয়ার ধারণায় ভারত প্রায়শই এক অন্তহীন আধ্যাত্মিকতা ও অসংগত রহস্যবাদের দেশ । তা সত্ত্বেও ভারতের আছে সংশয়বাদ ও যুক্তিপ্রয়োগের সুদীর্ঘ এক পরম্পরা।

গণিত ,জ্যোতির্বিজ্ঞান , চিকিৎসাশাস্ত্র ও রাজনৈতিক অর্থনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষ অবদান গুলি ছাড়াও সব মহান সভ্যতার মতোই এর আছে অজ্ঞেয়বাদী ও নাস্তিক্যবাদী সাহিত্যের বিপুলতম সম্ভার। অমর্ত্য সেনের লেখা বারবার উঠে আসে ভারতের বুদ্ধিচর্চায় সমৃদ্ধ ঐতিহ্য যার মধ্যে পড়ে চতুর্থ ও তৃতীয় খ্রীষ্টপূর্বাব্দে যথাক্রমে কৌটিল্য ও অশোক এবং খ্রিস্টাব্দ ১৫৯০-এর দশকের আকবরের রেখাঙ্কিত রাষ্ট্রপরিচালনার দর্শন সমূহ; তার লেখার মধ্যে আমরা পাই বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ইতিহাস ও প্রাসঙ্গিকতা; ভারতের প্রাচীন ও সুসম্বন্ধ বর্ষপঞ্জি; সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা; এবং ভারতের অতীত-বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে শ্রেষ্ঠ কবি রবীন্দ্রনাথ ও মহাত্মা গান্ধীর বিভিন্ন যুক্তিতর্ক। অমর্ত্য সেনের জোরালো যুক্তিতে উঠে আসে ভারতের গণতন্ত্রের সাফল্য; ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির রক্ষা , শ্রেণি ,জাতি ,লিঙ্গ ও সম্প্রদায়গত বৈষম্যগুলি দূরীকরণ এবং উপমহাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ভারতের তার্কিক ঐতিহ্যটির অনুধাবন ও অনুশীলনের অসীম গুরুত্ব।

কলমে- সিদ্দিক আলী (অধ্যাপক, জাকির হোসেন পলিটেকনিক কলেজ)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *