নজর বাংলা সম্পাদকীয় ডেস্ক: JNU এর প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট শাহেলা রাসিদের পিতা, নিউজ চ্যানেলে ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে বলেন – “শাহেলার কাছে প্রচুর ফরেন ফান্ডিং এসে থাকে। শাহেলা বিদেশি টাকা নিয়ে, দেশে অশান্তি করার চক্রান্ত করে চলেছ।” শকুন সবসময় মরা লাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। সমাজের প্রসিদ্ধ কিছু শকুন, এই তথ্য হাতে নিয়ে ময়দানে নেমে পড়েছে।
-এর পর থেকেই গোদী মিডিয়া থেকে শুরু করে, সোশ্যাল মিডিয়ায় লাগাতার শাহেলার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অপপ্রচারের যুক্তিযুক্ত কারণ রয়েছে।কারণ, অভিযোগ কোনো বিজেপি নেতা নন, বরং খোদ শাহেলার পিতা তুলেছেন।
অথচ -এর ব্যাকগ্রাউন্ডে লুকিয়ে থাকা এক করুন কাহিনী শুনলে, শাহেলার মধ্যে কোনো ভিলেন নয়, বরং, এমন একজন নায়িকা খুঁজে পাবেন, যাকে নিয়ে গোটা দেশবাসী গর্ববোধ করতে পারে।
ছোট্ট ফুটফুটে একটি মেয়ে, জ্ঞান হবার পর থেকেই, যে মেয়েটা অষ্টম-প্রহর নিজের মাকে, তার বাবার হাতে বেধড়ক মার খেতে দেখতো! পিটুনি খাওয়া মাকে, বাবার রোষানল থেকে বাঁচাতে, একরত্তি একটা মেয়ে, এবং তার দিদি, দুজনে মিলে মায়ের ঢাল স্বরূপ দাঁড়িয়ে পড়তো। কসাই পিতা, নিজের ছোট্ট দুটো কন্যাকেও রেয়াত করতো না।
নাবালিকা অবস্থাতেই দিদির বিয়ে হয়ে গেলো। মেয়েটি তখন বালিকা। সে দেখেছিলো, দিদির ইচ্ছের বিরুদ্ধে, পরিবারের লোক কেমন করে তার বিয়ে দিয়ে দিলো! রাগ হয়েছে, কিন্তু, প্রতিবাদ করার সাহস সঞ্চার করে উঠতে পারে নি।
মেয়েটি তখন কিশোরী।। মায়ের উপর অত্যাচার হলেই, সে প্রতিবাদে গর্জে উঠতো। কিন্তু প্রতিরোধ করে উঠতে পারতো না। যদিও তার মা এই জুলুম-অত্যাচার ভাগ্যলিপি হিসাবে মেনে নিয়েছিল। কিন্তু, ছোট্ট কিশোরী মেয়েটি, বিনা দোষে মায়ের উপর এই অত্যাচার, মেনে নিতে পারতো না।
পরিণাম ভয়ংকর। মেয়েটিকে দিনের পর দিন অনাহারে রেখে দেওয়া হতো। চুলের মুঠি জানালার সঙ্গে বেঁধে, আটকে রাখা হতো,,ঘন্টার পর ঘন্টা।
তবুও দমিয়ে রাখা যায়নি। সাইক্লোন-কে দমিয়ে রাখার ক্ষমতা, কোনো মানুষের থাকতে পারে না। কোনোরকমে কাশ্মীরে পড়াশোনা করে, উচ্চশিক্ষার জন্য চলে আসেন দিল্লির জওহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটি। সেখানে এসেই, তার প্রতিবাদী সত্বা, সম্পূর্ণ ভাবে স্বাধীনতা লাভ করলো।
তখন সে যুবতী। JNU ক্যাম্পাসে তার লড়াইয়ের হাতেখড়ি। এরপর দিল্লির রাজপথে, কখনো নারীদের
অধিকারের দাবীতে স্বোচ্চার, কখনো সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন, এভাবেই চলতে থাকে। সঙ্গে পড়াশোনাও।
এরপর শুরু হয়, অমানুষ বাবার বিরুদ্ধে তার আসল লড়াই। মায়ের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার লড়াই। নিজের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার লড়াই।
দীর্ঘ লড়াইয়ে পর, অবশেষে সুবিচার পাওয়া গেলো।।ষ বিগত 17 ই নভেম্বরে, আদালত এক হিংস্র স্বামী এবং দুস্কৃতকারী পিতার বাড়িতে ঢোকার অধিকার কেড়ে নিলো।
বর্তমানে শাহেলার মা, আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা ঠুকে দিয়েছেন। এর আগেও, 2005 সালে, তার বাবার
অত্যাচার দেখে, স্থানীয় ইসলামিক NGO, তার বাবাকে তলব করে। কিন্তু, তিনি নিজের শক্তি এবং প্রতিপত্তি দেখিয়ে, সবকিছু এড়িয়ে গেছেন।
এতদিন এটা ছিলো একটি পারিবারিক মামলা। কিন্তু, মামলায় পরাজিত হয়ে, শাহেলা রাসিদের পিতা, আব্দুল রাশিদ, কন্যা শাহেলাকে উচিত শিক্ষা (?) দিতে, বিদেশি ফান্ডিং নেওয়া টেররিস্ট হিসাবে প্রমাণ করতে ময়দানে নেমে পড়েছেন।
এটাকেই বিজেপি এবং RSS পরিচালিত, দু -টাকা পার পোষ্ট চার্য নেওয়া, IT সেল, হাতিয়ার করে ময়দানে নেমে পড়েছে। সঙ্গে রয়েছে, মোদী মিডিয়া। একটি পারিবারিক বিষয়কে, রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যাবহার করা হচ্ছে।
শাহেলার পিতার দেওয়া বাইট, গোদী মিডিয়া ব্রেকিং নিউজ হিসাবে প্রচার করে চলেছে। মজার ব্যাপার হলো, ঘটনার সত্যাসত্য যাচাই না করেই, তারা এক লড়াকু বাঘিনীর দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তুলে দিয়েছে।
শাহেলার সঙ্গে আপনার রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকতেই পারে।। কিন্তু, তার অদম্য জেদ, অপরিসীম সাহস, আর লড়াকু মানসিকতাকে, আপনি কোনোভাবেই অস্বীকার করতে পারবেন না।
অভাগা এই দেশের প্রত্যেকটি ঘরে জন্ম নিক একেকটা শাহেলা। কমরেড শাহেলা রাসিদ, তোমাকে জানাই লাল সালাম।
✍️কলমে- আলম মিদ্দে